পরিবর্তনের কথা বলে

Music

test

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Monday, February 3, 2020

প্রেমের সমাধী তাজমহল ২০১৯ | শাহজাহান মমতাজের প্রেম কাহিনী | রাজশাহী ভয়েস



তাজমহল ভারতীয় স্থাপত্য নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম যা নির্মিত হয়েছিল গভীর আবেগ ও ভালবাসার সংমিশ্রনে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৭ শতকের দিকে তার প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ এই সৌধটি নির্মান করেছিলেন। সেই অনন্য কীর্তি তাজমহল আজও বিশ্ববাসীর কাছে এক অপার বিস্ময়ের নাম।
ইতিহাস কাঁপিয়ে দেওয়া প্রেম কাহিনী তো অনেক আছে। কিন্তু এমন প্রেম কাহিনী খুব কমই আছে যার সাক্ষী এখনো পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমর সৃষ্টি তাজমহলের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে এমন নিদর্শন পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এই অনন্য নিদর্শনের পেছনে আছে একটি প্রেমের গল্প। যেই গল্প গড়ে তুলেছিল বিশ্বের অনন্য বিস্ময় তাজমহল।

তনু-মনু সবদিক থেকেই ১৫ বছরের এক টগবগে সুশ্রী তরুণ ছিলেন শাহবুদ্দীন মুহাম্মদ শাহজাহান। সেদিন আগ্রার বাজার দিয়ে চিন্তিত মনে চলতে চলতে হঠাৎ চোখ পড়ে যায় অনিন্দ্য সুন্দরী মুমতাজ মহলের দিকে। বাদশাহ শাহজাহান এই তরুণীর সঙ্গ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন তাই মমতাজের পিতা পারস্য সম্রাট আবদুল হাসান আসাফ খানের নিকট বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। মমতাজ মহলের বয়স তখন ১৪ বছর। এরপর ১৬১৬ সালের কোন এক শুভ দিনে আরজুমান্দ বানু পিতার প্রাসাদ ছেড়ে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের রাজপ্রাসাদে চলে আসেন। আর সেই আরজুমান্দ বানুই হল শাহজাহানের মুমতাজ মহল। বিবাহের আগে যিনি ছিলেন আরজুমান্দ বানু পরবর্তীতে তিনিই হয়ে উঠেন সম্রাট শাহজাহানের প্রিয় বেগম মুমতাজ মহল।
মুমতাজের ১৯ বছরের বৈবাহিক জীবনে ১৪টি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন এবং ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে সম্রাটের বেগম মুমতাজ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।
স্ত্রীর মৃত্যুতে শাহজাহানের চোখের সামনে যেন সব অন্ধকার হয়ে নেমে আসে। একটানা সাত দিন সাত রাত তিনি কিছুই মুখে দেননি । এমনকি ঘর থেকেও বের হন নি। সাত দিন পর যখন বের হন তখন দেখা যায় তার চুল দাড়ি ধূসর রঙের হয়ে গেছে, মুখ হয়ে গিয়েছে ফ্যাকাশে।
স্ত্রীর শোকে কাতর শাহজাহান তার প্রানপ্রিয় স্ত্রীর জন্য নির্মান করেন ভালবাসার এক অপরূপ নিদর্শন “তাজমহল”।

মমতাজের সমাধীকে কেন্দ্র করে এই তাজমহল নির্মিত হলেও ১৬৬৬ সালে শাহজাহানের মৃত্যু হলে তাকেও মুমতাজের সমাধীর পাশে সমাধীস্থ করা হয়। তাজমহলের নির্মান কাজ শুরু হয় ১৬৩২ সালে এবং শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। টানা একুশ বছরে ২২হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় তাজমহল। শুধু ২২ হাজার শ্রমিকই নয়, ১০০০এর ও বেশি সংখ্যক হাতি নির্মান সামগ্রী টেনে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। যমুনা নদীর তীরে এই তাজমহলকে দাড় করাতে নদীর তীর থেকে ১৬০ফুট উঁচু করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়।
তাজমহলের মূল নকশা করেন ওস্তাদ আহমেদ লাহোরী। সে সময় সব স্থাপনা লাল বালু বা পাথ্র দিয়ে স্থাপিত হলেও একমাত্র তাজমহলেই প্রথম শ্বেত পাথরের ব্যবহার হয় এবং এ পাথর আনা হয়েছিল সুদূর রাজস্থানের মাকরানা থেকে। মোট ২৮ ধরনের দুষ্প্রাপ্য দামি পাথর পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে আনানো হয় শ্বেতপাথরের গায়ে বসানোর জন্য। পান্না আসে পাঞ্জাব থেকে, চীন থেকে স্ফটিক, তিব্বত, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা থেকে আসে নানা ধরনের নীলকান্তমণি। ১৭ বছরের মাথায় অর্থাৎ ১৬৪৮ সালে তাজমহলের প্রাথমিক নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়। আশপাশের বাকি কাজুবাগান, তিন দিকের তিনটি প্রবেশদ্বার পুরোপুরি শেষ হতে আরও পাঁচবছর সময় লাগে।
তাজমহলের নির্মানকৌশল খুবই চমকপ্রদ। এটি এমন একটি শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে আছে যা ভুমিকম্পেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাজমহলের আকৃতি অষ্টকোণী এবং চারদিকে ১৬২.৫ ফুট উঁচু চারটি মিনার আছে। মিনারগুলো প্রত্যেকটি হালকা বাইরের দিকে ঝুকে আছে যাতে ভুমিকম্প হলে তাজমহলের মূল সৌধের উপর সেগুলো ভেঙে না পড়ে। তাজমহলের প্রতিটি ভাস্কর্য ও তার নকশা খুব প্রতিসম। সৌন্দর্য বর্ধনে সৌধের বিভিন্ন জায়গার দেয়ালে ব্যবহার করা পবিত্র কোরআনের বাণী এবং আল্লাহর ৯৯ নাম। তাজমহলের ভেতরের সাজসজ্জাও দারুণ। পাথরের পলিশ এতই উঁচুমানের যে, তার থেকে সর্বদা আলো প্রতিফলিত হয়।

পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু যার প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট । পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২ বাই ১০০২ ফুট। শুধু তাজমহলটি ১৮৬ বাই ১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের ওপর নির্মিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১ বাই ১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু।
তাজমহলের চারদিক এমনভাবে ডিজাইন করা যে একদিকে তাকালে অন্যদিকে আয়না দেওয়া আছে বলে মনে হয়। দিনের আলোর পরিবর্তনের সাথে সাথে তাজমহল রঙ বদলাতে শুরু করে। যেমন করে পরিবর্তন হয় একজন নারীর মন । একদম ভোরের আলো ফুটবার সাথে সাথে এক হালকা গোলাপীর মূর্ছনায় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে তাজমহল। আবার রাতের দিকে এটিকে দেখা যায় স্নিগ্ধ সফেদ রঙে। এই পরিবর্তনগুলো তাজমহলকে দিয়েছে অনন্য এক বৈচিত্র্য।
অন্যসবকিছুর মতই তাজমহলেরও রয়েছে বিভিন্ন বিতর্ক, রহস্য এবং মিথ। অনেকেই বলে থাকেন শাহজাহান তাজমহলের ডিজাইনারের চোখ উপড়ে নিয়েছিলেন যাতে ঐ চোখ দিয়ে দ্বিতীয় কোন তাজমহলের ডিজাইন করতে না পারে। আবার এটাও বলা হয়ে থাকে যে, তিনি নাকি নির্দেশ দিয়েছিলেন তাজমহল বানাতে যে সকল কর্মী নিয়জিত ছিল তাদের সবার যেন হাত কেটে ফেলে হয় যাতে পৃথিবীতে তারা দ্বিতীয় কোন তাজমহল বানাতে অংশগ্রহন করতে না পারে। এটার সত্যতা নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ কোন যুক্তি দেখাতে পারে নি।
আরো বলা হয়ে থাকে, মমতাজের সমাধীসৌধ তৈরী হয়ে গেলে শাহজাহানের পরিকল্পনা ছিল যমুনার ওপর পাশে একটি কালো তাজমহল বানানোর। কিন্তু জীবনের শেষ মূহুর্তে বন্দিদশায় কাটানোর কারনে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে উঠে নি।
এসব বিতর্ক মনে হয় চিরকাল বিতর্কই থেকে যাবে। সবকিছু ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে ঠায় দাঁড়িয়ে রবে তাজমহল। এত দ্বিধা আর সংশয়ের ভিড়ে মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে চায় মুঘল সম্রাট শাহজাহান আর মমতাজ যে সৌধের ছায়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন, সেই সৌধটি আসলে তাদেরই ভালোবাসার নিদর্শন। সত্যিকার অর্থেই স্ত্রীর প্রতি অমর ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তৈরি করেছেন এই তাজমহল।

Post Top Ad

Your Ad Spot