পরিবর্তনের কথা বলে

Music

test

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

Monday, February 3, 2020

৬০ সেকেন্ডে ১মিনিট, ৬০ মিনিটে ১ঘন্টা। কেন হয়?



কেনই বা ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট হয়? কেন ৬০ মিনিটকে ১ ঘন্টা ধরা হয় ? ৬০ মিনিটই কেনো? ১০০ মিনিটেও তো এক ঘণ্টা হতেই পারত, তাতে অসুবিধা কিসের ছিলো? কিংবা ১০০ সেকেন্ডে ১ মিনিট ও হতে পারতো? সেই হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা পদ্ধতিতেই এই হিসাব এখনও করা হয়। এই নিয়ম চালু হওয়ার পেছনে ইতিহাসবিদরা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
সংখ্যাগত কারণ :
১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিটি এসেছে আমাদের হাতের যে ১০টি আঙ্গুল আছে তার কারণেই, কারন এর ফলে কোনও কিছু গণনা করতে সুবিধা হয়। আজ থেকে অন্তত প্রায় ৫,০০০ বছর আগে, সুমেরীয় সভ্যতা তাদের জটিল গাণিতিক এবং জ্যামিতিক হিসাব করার জন্য দশমিক সংখ্যা ব্যবহার করার পরিবর্তে ১২ এবং ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতো।
এই ১০ ভিত্তিক পদ্ধতির একটি সীমাবদ্ধতা হলো, এই সংখ্যাটিকে ২ ও ৫ ছাড়া অন্য কোনও সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় না। সেই তুলনায় কিন্তু দেখতে গেলে ১২ কে ২, ৩, ৪, ৬ দ্বারা এবং ৬০ কে ২ থেকে ৬ পর্যন্ত সব সংখ্যা দিয়েই ভাগ করা যায়। ফলে এসব পদ্ধতিতে ভগ্নাংশের কাজের হিসেব করা অনেকটাই সহজ ছিল।
এছাড়া সুমেরীয় সভ্যতার মানুষদের পরবর্তীতে ব্যাবলনীয়রা তাদের হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আর যে বাকি চারটি আঙ্গুল আছে তার তিনটি করে বিভাজন হিসেব করে এক হাতে মোট ১২ পর্যন্ত গণনা করত। এক হাতের ১২টি সংখ্যাকে যদি অন্য হাতের ৫টি আঙ্গুল দ্বারা গুণ করা হয় তাহলে দুই হাত মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ পাওয়া যায়। এটিও এই মিনিট-সেকেন্ড গননা করার ক্ষেত্রে এই ৬০ সংখ্যাটি নির্বাচন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।


জ্যামিতি ও জ্যোতির্বিদ্যা :
সুমেরীয় সভ্যতা পতন হয়ে যাওয়ার পরে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্যাবলনীয়রা কোণ পরিমাপ করার জন্য ডিগ্রীর আবিস্কার করে। সে সময় তারা মনে করত যে, পৃথিবী ৩৬০ দিনে মাত্র একবারই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। অর্থাত্‍ যদি প্রতিদিনের কৌণিক আবর্তনকে ১ ডিগ্রি হিসেবে ধরা হয়, তাহলে একবার পূর্ন প্রদক্ষিণ করতে ৩৬০ ডিগ্রি সম্পন্ন হয়। তাই, ১° কৌণিক আবর্তন = ১দিন ধরা হল এবং ৩৬০ দিন নিয়ে হল এক বছর।
৩৩৫ থেকে ৩২৪ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট একটি বিশাল এলাকা জয় করেছিল, তার ফলে ব্যাবিলনের এই জ্যোতির্বিদ্যা গ্রীস এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর যখন ইসলামের আবির্ভাব ঘটে তখন মুসলিম বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদরাও রোম এবং ভারত থেকে সময় পরিমাপের ক্ষেত্রে এই ১২ এবং ৬০ সংখ্যাটিকে গ্রহন করে। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে।তারা দিন ও রাতকে ১২ ঘন্টা করে ভাগ করলো, মোট একদিন সমান হল ২৪ ঘন্টা। এতদিনে ৬০ সংখ্যাটিরও প্রচলন হয়ে যাওয়ায় প্রতি ঘন্টাকে ৬০ ভাগে ভাগ করলো যেটা হচ্ছে মিনিট। ঐতিহাসিকভাবে, মিনিট শব্দটি এসেছে লাতিন 'পারস মিনুটা প্রইমা', যার অর্থ, 'প্রথম ক্ষুদ্র অংশ'।
সেকেন্ডের প্রথম দিকের যে সংজ্ঞাটি ছিল সেটি ছিল পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণনের উপর ভিত্তি করে। তখন বলা হতো, পৃথিবী যে সময়ে নিজ অক্ষের উপর সম্পূর্ণ একবার আবর্তিত হয় তার ৮৬৪০০ ভাগের এক ভাগকে এক সেকেন্ড বলে। এই ৮৬৪০০ সংখ্যাটাও এমনভাবে নেয়া হয় যেন এর ৬০টা ভাগ মিলিয়ে ঐ ১ মিনিটের সময়ের সমান হয়। কিন্তু ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করল যে পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ননের গতি স্থির নয়। অর্থাৎ তখন থেকেই তারা সেকেন্ডের সংজ্ঞা দেয়ার জন্য পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিকে বাদ দিয়ে নতুন একটি সংজ্ঞা খুজছিল। এটমিক ঘড়ির উন্নতির ফলে এটা দৃশ্যমান হয়ে গেল যে সেকেন্ডের সংজ্ঞা আসলে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারেই করা উচিত। একারণেই ১৯৬৭ সালের পর থেকে সেকেন্ডের নিম্নোক্ত সংজ্ঞাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে:
"শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় একটি অনুত্তেজিত সিজিয়াম ১৩৩ পরমাণুর ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে।"
এবার মাসের বিষয়টা খেয়াল করুন। ৩০ দিনে একমাস হল কিভাবে? এটা ঠিক হয়েছে চাঁদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে। চাঁদ প্রতি ২৭.৫-৩১ দিন অন্তর পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। তাই এই সময়কে একমাস ধরা হল।
এখন, দেখা গেল সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর যতদিন লাগে সেটার সংখ্যা ১২টা মাসের দিন সংখ্যার সমান। তাই ১২টা মাস=১ বছর ধরা হল।

লেখকঃ সাইমুম সালেহীন

Post Top Ad

Your Ad Spot