চীনের উহান প্রদেশে সর্বপ্রথম সবার নজরে আসে এক মহামারী ভাইরাসের, যেটির ভয়ে এখন পুরো বিশ্ববাসী আতঙ্কিত। আর সেই ভাইরাসটি হচ্ছে 2019-novel coronavirus। সংক্ষেপে যেটি এখন সবার কাছে করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। এটি প্যাথোজেন পরিবারের একটি ভাইরাস যার কারণে এর আগে সার্স ও মার্স ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই আবার নেই এর নির্মূলের কোনও ভ্যাকসিনও। চীন ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১১টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। যেহেতু এসব দেশে বাংলাদেশীদের আসা যাওয়া রয়েছে সেহেতু বাংলাদেশও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিতে আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতিমধ্যেই 'মিউটেট করছে' অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে - যার ফলে এটি আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।
এই ভাইরাসটি মূলত প্রথমে মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই একজনের দেহ থেকে আরেকজনের ছড়িয়ে যায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে। তবে এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। এই ভিলেখাটি প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭২ জন। করোনার ভয়াবহতা এতোটাই যে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি আক্রান্ত প্রদেশগুলো থেকে কাউকে বাইরে এবং বাইরে থেকে কাউকে ভিতরে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
গত ৩১ই ডিসেম্বর ২০১৯ইং তারিখে প্রথম চীনের উহান শহরে এই রোগের সূচনা ঘটে। এরপর ১১ই জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু ঘটে। উহান শহরে একটি মাংসের দোকান থেকে এই ভাইরাসটির উৎপত্তি বলে জানা গেছে। প্রথমে বাদুর থেকে সাপ এবং পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এই ভাইরাস। যেহেতু বেশিরভাগ চীনারা বন্যপ্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহন করে সেক্ষেত্রে সাপ বা বাদুর ভক্ষন দ্বারাই এই ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করেছে বলে সবাই মনে করেন।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কোন চিকিৎসা না থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে মানুষকে নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা। এশিয়ার বহু অংশের মানুষ সার্জিক্যাল মুখোশ পরা শুরু করেছে। আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ডাক্তারদের পরামর্শ, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরিধান করা।
লেখাঃ মামুনুর রশিদ