![]() |
জাহাজভাঙ্গা কারখানা (ছবি : সংগৃহীত) |
বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম’ প্রকাশিত তালিকায় জাহাজভাঙায় শীর্ষে বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজ ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশে। এসব জাহাজ সীতাকুণ্ডের উপকূলে জাহাজভাঙা কারখানায় ভাঙ্গা হয়।
গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটি এই তালিকা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলছে, ২০১৯ সালে বিশ্বে ৬৭৪টি সমুদ্রগামী পুরনো জাহাজ বিক্রি হয়। এর মধ্যে ২৩৬টি জাহাজ বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা কিনেছেন। এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের কারখানা মালিকেরা মোট জাহাজ বিক্রির ৬৫ শতাংশ কিনেছেন।
২০১৯ সালের শেষে জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা ‘আঙ্কটাডের’ প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০১৯’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালেও বাংলাদেশ ছিল জাহাজভাঙায় শীর্ষে। সে সময় বিশ্বে যত জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছিল তার ৪৭ দশমিক ২ শতাংশই ভাঙ্গা হয়েছিল বাংলাদেশে। সে বছর ভারতকে টপকে বাংলাদেশ প্রথম স্থান দখল করেছিল।
জাপান শিপ বিল্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের জাহাজভাঙার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একসময় জাহাজভাঙ্গা শিল্পে তাইওয়ানের নেতৃত্ব ছিল। নব্বই দশকে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াও শীর্ষ স্থানে উঠে আসে। এর পরের দুই দশকে শীর্ষ অবস্থানে ছিল চীন ও ভারত। এভাবে বিভিন্ন দেশ এই খাত থেকে সরে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে চলছে প্রতিযোগিতা। বিগত ২ বছরে তো ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বেশির ভাগ দেশের জাহাজভাঙ্গা থেকে দূরে আসার মূল কারণ ছিল পরিবেশ দূষণ। এসব দেশ ইস্পাতপণ্য তৈরির জন্য প্রাথমিক কাঁচামাল হিসেবে পুরনো লোহার টুকরা বা মৌলিক কাঁচামাল আকরিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে এখনও বাংলাদেশের রড তৈরির কারখানাগুলোতে জাহাজভাঙা কারখানা কাঁচামালের একটা অংশ জোগান দেয়। এতেই এই খাতটি শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে। এর সঙ্গে দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর এ খাতে ২৪ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা যান।
জাহাজভাঙা খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, এখন জাহাজভাঙার কাঁচামালের ওপর বিশ্বের অনেক দেশই নির্ভরশীল নয়। জাহাজভাঙা কারখানা থেকে বাংলাদেশে রড তৈরির কাঁচামাল সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো জাহাজ থেকে পাওয়া নানা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামেরও বড় বাজার আছে। এসবের চাহিদা বাড়ছে বলেই আমদানিও বাড়ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছর ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টন পুরনো লোহার টুকরা আমদানি হয়েছে। একই সময়ে জাহাজভাঙা কারখানায় ভাঙ্গা জাহাজ থেকে ২৫ লাখ ৬৯ হাজার টন লোহা পাওয়া যাবে। এ হিসেবে ৭৩ লাখ ২৬ হাজার টন রডের কাঁচামালের সরবরাহ ছিল। অর্থাৎ আমদানি পর্যায়ে জাহাজভাঙা কারখানা থেকে ৩৫ শতাংশ কাঁচামাল আসছে। এছাড়া জাতীয় উৎস থেকে কয়েক লাখ টন কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়।
অন্যদিকে ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, এখনও জাহাজভাঙা কারখানাগুলো বাংলাদেশে রড তৈরির কাঁচামালের প্রায় ৩০ শতাংশ জোগান দেয়। উদ্যোক্তারা চাহিদার বাকি কাঁচামাল সরাসরি পুরনো লোহার টুকরা হিসেবে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করে থাকেন।